বাংলাদেশ পৃথিবীর দূর্যোগ প্রবণ দেশ গুলোর
মধ্যে অন্যতম। অতীতে আমাদের দেশে দূর্যোগ বলতে শুধু ঘূর্ণিঝড়, খড়া, বন্যা,
ভূমিকম্পের নামই পরিচিত ছিল, কিন্তু সম্প্রতি বেশ কয়েক বছর হল অগ্নিকাণ্ড,
ভবন ধ্বস এর মত দূর্ঘটনা রীতিমত প্রায় দূর্যোগ হয়েই দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশের স্মরণ কালের ইতিহাসে গত বুধবার
(২৪শে, এপ্রিল) সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ার ঘটনা অত্যন্ত ভয়াবহ। ঐদিন
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রানা প্লাজা নামের নয়তলা
ভবন ধ্বসে যায়, যার প্রথম দুই তলায় রয়েছে ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, প্রসাধন
সামগ্রী ও কাপড়ের মাকের্ট এবং ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখা, আর তৃতীয় থেকে
ষষ্ঠ তলায় পাঁচটি পোশাক কারখানা, যেখানে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার শ্রমিক
কাজ করতেন। তারা সবাই আটকা পড়েছেন এই ধ্বসে পড়া ভবনে। তাদের কেউবা মারা
গিয়েছেন সাথে সাথে, আবার কেউ কেউ বেঁচে আছেন ধ্বংস স্তুপের ভিতরে আহত
অবস্থায় জীবনে-মরণের সাথে যুদ্ধ করে।
যেহেতু বাংলাদেশ আগে থেকেই রয়েছে
ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে, আর এর সাথে নিয়ম না মেনে কিংবা অবৈধ ভাবে সুউচ্চ ভবন
তৈরি করার জন্য ঝুঁকি বেড়েছে কয়েক গুণ। সামান্য একটু ভূমিকম্পের আঘাতে যে
কোন সময় আমাদের কর্মব্যস্ত নগরী পরিণত হতে পারে ধ্বংস স্তুপে। এই ভয়াবহ
পরিস্থিতিতে পড়লে যারা সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে প্রাণে বেঁচে থাকবেন তাদের
জন্য করণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলঃ
- আপনি যদি কখনো কোন বিল্ডিং এর নিচে চাপা পড়েন তাহলে প্রথমে মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। এবার বেশি নড়াচড়া না করে দেখে নিন আপনি সম্পূর্ণ অক্ষত আছেন কি না। যদি অক্ষত থাকেন কিন্তু চাপা পড়ে থাকেন তাহলে বের হবার জন্য জোরাজোরি করবেন না। প্রথমে আগে বোঝার চেষ্টা করুন যে আপনি সোজা না উল্টা হয়ে আছেন। এজন্য আপনার থুতু নিয়ে নাকের উপরে দিন। এটা যদি নাকের উপরের দিকে যায় তবে বুঝবেন আপনি উল্টা হয়ে আছেন আর যদি নিচের দিকে যায় তবে আপনি সোজা হয়েই চাপা পড়েছেন। আপনার অবস্থান বুঝতে পারলে এবার নজর দিন আশেপাশের পরিস্থির উপরে। আসেপাশে কেও আছে কি না বোঝার চেষ্টা করুন।
- ভবন ধ্বসে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সাধারণত উদ্ধার কাজ শুরু হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখার চেষ্টা করবেন নতুন কোন ধরনের নড়াচড়া বা লোকজনের চলাচলের শব্দ বা আভাস পাওয়া যায় নাকি। কারো আভাস পেলেই চিৎকার করে আপনাকে উদ্ধার করতে বলুন। অযথা চিৎকার করতে নিজের শক্তি ক্ষয় করতে যাবেন না।
- সাথে যদি কোন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র থাকে যেমন মোবাইল ফোন বা টর্চ লাইট তবে তার পূর্ণ ব্যাবহার করুন। সিগন্যাল পেলে পরিবার বা এমন কাউকে ফোন দিন যারা সাহায্য করতে পারবে অতি দ্রুত। টর্চ থাকলে তা জ্বালিয়ে নিভিয়ে সিগন্যাল দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
- যদি মনে হয় আপনি নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না তাহলে হাতের তালু দিয়ে কাপ তৈরি করে নিজের নাক মুখের উপরে আলতো করে ধরুন। এতে আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস এর সাথে বের হয়ে যাওয়া অক্সিজেনের কিছুটা আবার আপনি গ্রহন করতে পারবেন। এছাড়াও বিল্ডিং ধসে পড়ার পড়ে চারপাশ ধুলাবালিতে ঢেকে যায়। সেক্ষেত্রে শ্বাসের সমস্যা হতে পারে। সাথে যদি রূমাল থাকে তাহলে তা নাকেমুখে বেঁধে নিন। না থাকলে পরনের কাপড় বা ওড়না থাকলে তা দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে নিন। এতে নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হবেনা।
- যদি এমন হয় যে চাপা পড়ার কারনে আপনার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কেউ তখনও এসে পৌছাতে পারেনি, সেক্ষেত্রে নিজেকে মুক্ত করার জন্য ধীরে ধীরে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। প্রথমে আপনার উপরে যে সব ছোটখাটো জিনিশ আছে যার নিচে আপনি চাপা পড়ে আছেন তা সরানোর চেষ্টা করুন। তবে কোনটা পুরোপুরি সরানোর আগে দেখে নিন নতুন করে কোন দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা আছে কি না। যদি এমন হয় যে নিজেকে বের করতে পারছেন না কিন্তু কাছের ছোট কোন ফাটল দিয়ে আলো আসছে সেক্ষেত্রে সেই ফাটল দিয়ে হাত বের করে জোরে জোরে নাড়াতে চেষ্টা করুন। এতে আপনাকে উদ্ধারকারীরা সহজে খুঁজে পাবে।
- যদি নিজেকে চাপা পড়া অবস্থা থেকে মুক্ত করতে পারেন তাহলে আগে দেখে নিন কোথাও কোন কাটা-ছেঁড়া আছে কি না। বেশি কেটে গিয়ে রক্তপাত হতে থাকলে কাপড় দিয়ে বেধে নিন। হাত বা পা বা অন্যান্য অংশে ব্যথাবোধ হলে সেই স্থানটিও সাবধানে শক্ত করে বেধে নিতে পারেন। এতে কোথাও কোন ফ্রাকচার হলে পরবর্তীতে চিকিৎসার সময় তা সাহায্য করবে।
- আপনার আসেপাশে যদি কেউ নিজে থেকে মুক্ত হতে পারে তবে তাকে সাহায্য করতে বলুন। আপনিও যদি নিজেকে মুক্ত করতে পারেন তবে বাকি আটকে পড়া মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে যান। হয়ত দুই তিন জন মিলে ভেতর থেকে চেষ্টা করলে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে জীবিত উদ্ধার করতে পারবেন।
- যদি বিল্ডিং দুর্ঘটনার ফলে আপনি চাপা পড়েন ও নিজেকে নাড়াবার ক্ষমতা না থাকে আপনার তবে জোর করতে যাবেন না। ভয়ও পাবেন না। হয়ত ভারি কিছুতে চাপা পড়ার কারনে নড়তে পারছেন না আপনি। সেক্ষেত্রে আশেপাশে মানুষের উপস্থিতি পেলে জোরে জোরে চিৎকার করুন। কেউ না কেউ আপনার চিৎকার শুনে আপনাকে উদ্ধার করতে আসবে।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পোস্ট টি দেখার জন্য ধন্যবাদ। কেমন লাগলো কমেন্ট এ জানান, কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।