চুল পড়ছে। কী যে করি! এমন কথা প্রায়ই শোনা যায়। আর গরমে চুল পড়ার হার তুলনামূলকভাবে একটু বাড়ে। তাই বলে তো বসে থাকলে চলবে না। চুল পড়া কমানোর সমাধান দিয়েছেন কিউবেলার রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা
আরমান। তিনি জানান, গ্রীষ্মকালে মাথার
ত্বকের ধরন পরিবর্তন হয়। ত্বকের
গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হয়। ফলে চুল তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের কারণে চুল পড়ে অনেক সময়। এ ছাড়া চুলের গোড়ার ঘাম না শুকালে, অতিরিক্ত তেলযুক্ত
খাবার খেলে, চুলের ধরনের সঙ্গে মানানসই নয় এমন শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করলে সাধারণত
চুল পড়ে।
আর এসব থেকে মুক্তি পেতে কী করবেন? ফারজানা আরমান মনে
করেন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস থাকলে আমাদের চুল পড়ার হার অনেকটা কমে আসবে। তবে প্রতিদিন ১০০টি চুল পড়লে চিন্তিত হওয়ার
কোনো কারণ নেই। পুষ্টিযুক্ত পরিমিত
খাবার খেলে তা চুলেও পুষ্টি জোগায়। খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ফল, সবজি থাকতে হবে। এসব খাবার খেলে
চুলের গোড়া শক্ত হয়। ফলে চুল পড়া কমে
যায়। এ ছাড়া চুলের গোড়ায় তেল ও ময়লা জমার কারণেও
চুল পড়ে। সে জন্য খুব ভালো
হয় ঘন শ্যাম্পু ব্যবহার না করে একটু পাতলা ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করলে। ঘন শ্যাম্পু হলে তার সঙ্গে সামান্য পরিমাণে
পানি মিশিয়ে নিতে পারেন। শ্যাম্পু দিয়ে মোটা চিরুনি বা ব্রাশ দিয়ে চুলের আগাগোড়া আঁচড়িয়ে ফেলুন। এরপর পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন, যাতে চুলে কোনো
শ্যাম্পু না থাকে। এভাবে প্রতিদিন
চুলে শ্যাম্পু করা যেতে পারে। এবার ব্যবহার করুন কন্ডিশনার। কন্ডিশনার কখনোই চুলের গোড়ায় লাগাবেন না। সারা মাথার চুলে কন্ডিশনার লাগিয়ে দু-তিন মিনিট রেখে ধুয়ে
ফেলুন।
চুল পড়া কমাতে যা ব্যবহার করবেন
লিভ ইন কন্ডিশনার: সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চুলকে রক্ষা
করে লিভ ইন কন্ডিশনার। রং করা চুল কিংবা
কোঁকড়া চুলের জন্য এ কন্ডিশনারটি ব্যবহার করা ভালো।
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার: শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়ার পর পানিতে
লেবুর রস মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল ঝরঝরে হয়ে গেছে। এ ছাড়া সাদা সিরকাও এভাবে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
হট অয়েল ট্রিটমেন্ট: তৈলাক্ত চুলসহ যেকোনো চুলের জন্য এটি
উপকারী। তেল হালকা গরম করে
তুলা বা হাত দিয়ে হালকা করে মাথার ত্বকে ঘষে লাগান। আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
টু-ইন শ্যাম্পু: যেসব শ্যাম্পুর গায়ে টু-ইন লেখা থাকে তা
এ দেশের আবহাওয়ার জন্য খুব একটা উপযোগী নয়। একনাগাড়ে এ ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত নয়।
চুলের প্যাক
হেনা, সামান্য পরিমাণে টকদই ও ডিমের মিশ্রণ।
ডিম, মাখন, সামান্য পরিমাণে পানি ও জাম্বুরার রস মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
জলপাই তেল,
১০ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল মিশিয়ে হালকা গরম করে এর মধ্যে
দুটি ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল মিশিয়ে তা চুলে দিন। সম্ভব হলে চুলে গরম পানির ভাপ দিতে পারেন। এ জন্য তোয়ালে গরম পানিতে ডুবিয়ে নিন। এরপর এর পানি ঝরিয়ে মাথায় জড়িয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন।
পাকা কলা,
এক চামচ টকদই ও এক চামচ জলপাই তেল মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারেন।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চর্মরোগ বিভাগের সহযোগী
অধ্যাপক রাশেদ মোহাম্মদ খান বলেন, মানসিক চাপ, বড় অসুখের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া,
মাথার ত্বকে চর্মরোগ, বংশগতির কারণেও চুল পড়ে। তবে চুল পড়া কমাতে প্রধানত চুলে পুষ্টি জোগাতে হবে। সে জন্য তেল-মসলাযুক্ত খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার
পরিহার করতে হবে এবং মানসিক চাপ কমাতে হবে। এ ছাড়া সময়মতো খাওয়া-ঘুমানো ও পানি পরিমাণমতো পান করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, শ্যাম্পু করার সময়
যেন নখের আঁচড় মাথার ত্বকে না লাগে।
আরেকটি বিষয় হলো, চুল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা গজিয়ে যায়। সে কারণে এটি নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কিছু নেই। খুশকি দূর না হলেও চুল পড়ে। খুশকি থাকলে সপ্তাহে দুই দিন খুশকি প্রতিরোধী
শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। অন্যান্য দিন প্রোটিন, অ্যামাইনো প্রোটিন
সমৃদ্ধ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয়। নিয়মিত জলপাই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে জেল ও চুলের স্প্রে কম ব্যবহার করাই ভালো। এতে চুলের ক্ষতি কম হয়। আসল কথা হলো, চুলকে পরিষ্কার
রাখতে হবে। তবেই দেখবেন চুল
পড়া কমে গেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
পোস্ট টি দেখার জন্য ধন্যবাদ। কেমন লাগলো কমেন্ট এ জানান, কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।